সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাবা দিবস

আমার কাছে তার কোন ছবি নাই!

মিজান বিন মজিদ
১৯ জুন ২০২০

ক্লাস টেনে পড়ি কাটগড় মাদ্রাসা, সন্দ্বীপে। খবর কোন মাধ্যমে জেনেছি তাও মনে নেই। যেদিন জেনেছি সেই দিন আজকের মোহাম্মদপুর, তখনকার চরক্লার্কে আসতে ট্রলার ছিল না। পর দিন ফিরলাম বাড়ি। ১৯৯৫ সালের সেই দিন। বাড়ি থেকে মাইলখানেক দূরে থেকে কলিজার ডাক, "....। মনে পড়ে প্রয়াত কাকা নূরুল হুদার কান্ধে ভর দিয়ে বাড়ি পৌঁছালাম। বোনদের বুকফাটা আর্তনাদ, "ভাইরে আব্বা নাই।" 

কবরে জানাযায় আমি বিলম্বকারী। মা বারবার জিজ্ঞেস করতেন মিজানরে খবর দিই? না বলতেন। অসন্তুষ্ট ছিলেন। তার অজান্তে জমি বন্দক দিয়েছি। মৃত্যুর আগেই ভাই বোনের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে জমি দলিল করে রেখেছেন, সেই জমি বন্দক দিলাম তার অজান্তে! দেখিনি তার শেষ সময়গুলো। বলতে পারেন নি আমায় কিছু। ক্ষুদ্র জীবনে সেটাই আমার বৃহত্তম হাহাকার।

যতবার সন্দ্বীপ থেকে আসতাম, চাহিদা থাকত তিন চার হাজার। প্রথমে বলতেন অসম্ভব!  যাবার দিন পাঁচশো হাজার বেশি দিয়ে বলতেন, 'জায়গাজমি গরুগোতান বাড়িঘর সব তোল্লাই, বালা করি হোয়া লেয়া করিও।

আলেম বানানোর ইচ্ছা ছিল। মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা আর উচ্চশিক্ষার অনপনেয় আকাঙ্ক্ষা তার ইচ্ছাতে বাধ সাধে। আমারও অন্যতম আক্ষেপ 'আলেম' না হতে পারা। অলক্ষ্যে থেকে তিনি এখনো নাখোশ কি? মাঝেমধ্যে এই প্রশ্ন ঘুরতে থাকে মানমন্দিরে। ক্ষমিও: আমার জীবনের প্রথম ও প্রধান 'Icon'  মরহুম আব্দুল মজিদ। 

তার ইচ্ছাছবিটি নিত্যসঙ্গী করবার মহান অভিলাষে ফেসবুক নামে যুক্ত করেছি, 'মজিদ'। তার ক্যামেরাছবি নাই ধর্মবোধ থেকে! যেমন নেই মা মহিয়সী রৌশন আরা বেগমের। যারা থাকেন শরীরের শিরায় শিরায় তাদের ছবিতে কি কাজ! যারা আছেন তন্ত্রে তন্ত্রিতে অস্থি মজ্জায় তাদের ক্লিক যে প্রাণে প্রাণে! দুর্বাঘাসে ঢাকা ফরাজি কবরস্থান আমার প্রিয় গন্তব্য। 

পিতৃশুন্য একুশ বছর! মাতৃমমতা পাই না তিন বছর। চারদিকে একি বালুচর!

চশমাপরা কোরআন তেলাওয়াতরত বাবার ছবিটি এখন পষ্টাপষ্টি দেখছি। তার হাত ধরে প্রথম স্কুলে যাবার স্মৃতিময় দিনটি এইক্ষণে কড়া নাড়ছেই তো নাড়ছে। প্রায় অক্ষরজ্ঞানহীন মানুষটি আমার জীবনের সবচে শ্রেষ্ঠপুরুষ। তিনি আমায় অক্ষরচেনানো প্রথমপুরুষ।

অতএব তার ছবি বাহুল্য আমার জন্যে। ছবি নাই তাই!

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ

ভুল নম্বরে টাকা গেলে ফেরত পাবেন যেভাবে
করোনা সংকটে সিঙ্গাপুরে অগ্রণী ব্যাংকের রেমিট্যান্স সেবা প্রশংসিত

আপনার মতামত লিখুন